Sunday, December 14, 2025

স্বামী হত্যার অভিযোগে গ স্ত্রী ও তার প্রেমিক গ্রেফতার

পাবনার চাটমোহর উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামে ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনার ১০ দিন পর জানাজানি হলে অভিযুক্ত স্ত্রী শারমিন খাতুন ও তার প্রেমিককে আটক করেছে পুলিশ।

বিষয়টি শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে জানতে পেরে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানায়৷ পরে তাদের আটক করা হয়। এর আগে গত ৩০ নভেম্বর চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের বরদানগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত স্বামী শের আলী (৩৫) বরদানগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের ভোলা প্রামানিকের ছেলে। 

আর অভিযুক্ত শের আলীর স্ত্রী শারমিন খাতুন (২৬) কাটেঙ্গা গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে এবং তার প্রেমিক অনিক (২২) একইগ্রামের মহাজন সরকারের ছেলে। 

স্থানীয় ও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, গত ৩০ নভেম্বর কাটেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা শের আলীর মৃত্যু হয়। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে বিষয়টি শুরুতে মেনে নিলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।

জানা যায়, শের আলীর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ইউটিউবারদের মাধ্যমে চিকিৎসা সহায়তার অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, সেই অর্থের একটি বড় অংশ শারমিন মাঝেমধ্যেই তার প্রেমিক অনিক (২২) কে দিতেন।

মৃত শের আলীর ফুপাতো ভাই এনামুল হোমেনের দাবি, শারমিন ও অনিকের মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জারে হওয়া কথোপকথন ঘেঁটে টাকা লেনদেনের একাধিক তথ্য পাওয়া যায়। ওই চ্যাটিং থেকেই প্রথম নিশ্চিত হওয়া যায় যে, চিকিৎসার জন্য উত্তোলিত অর্থ নিয়মিতভাবে অন্যত্র চলে যাচ্ছিল।

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে পরিবারের সদস্যরা কৌশল অবলম্বন করেন। শারমিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকেই অনিককে টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আসতে বলে মেসেজ পাঠানো হয়। অনিক সেই মেসেজের জবাব দিয়ে টাকা নিতে যান।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকেই সতর্ক থাকা স্থানীয়রা তাঁকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন বক্তব্য ও পরস্পরবিরোধী তথ্য দিলে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।

পরে আটক অনিক ও শারমিন স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, প্রায় চার মাস ধরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। অনিক দাবি করেন, তিনি প্রথমে শারমিনের ননদ নদীর সাথে সম্পর্কের সূত্রে ওই বাড়িতে যাতায়াত করেন। একপর্যায়ে অনিক ও শারমিন পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে একাধিকবার সাক্ষাৎ ও শারীরিক সম্পর্কের কথাও স্বীকার করেন তারা।

আটক শারমিন এলাকাবাসীর সামনে স্বীকার করে জানান, গত ৩০ নভেম্বর একসঙ্গে দশটি ঘুমের ওষুধ তার স্বামী শের আলীকে খাইয়েছিলেন। পরে শের আলীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। সবাই তার মৃত্যু ক্যান্সারে হয়েছে মনে করে দাফন সম্পন্ন করেন।


শের আলীর মা শিরীনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার অসুস্থ ছেলেকে ওর বউ ঘুমের ওষুধ খাইয়েছে। সে সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে এসে দেখি আমার ছেলে আর বেঁচে নেই। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”

খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে আটক না করে অভিযোগ না থাকার কথা বলে স্থানীয়ভাবে সালিশের সুযোগ দিয়ে ফিরে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্রাম্য নেতাদের উপস্থিতিতে সালিশ বসানোর প্রস্তুতির সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পুনরায় ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এরপর শারমিন ও অনিককে আটক করে থানায় নেওয়া হয়।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরওয়ার হোসেন বলেন, মৃত ব্যক্তির পরিবারে পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি বা মামলা করেনি। যেহেতু ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে আটক করা হয়েছে, সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের পাবনা আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: